আরেকটি বছর শেষ হয়ে এল। বছর শেষে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে গলদঘর্ম আমাদের অডিওবাজার। সাম্প্রতিক সময়ে এত হতাশাজনক বাজার আর আসেনি বলে জানিয়েছেন অডিও প্রযোজকেরা। কেন এই মন্দা? প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই পুরোনো কারণ—পাইরেসি, শেয়ারিং, এমপিথ্রি ইত্যাদি। পুলিশের সহায়তায় কয়েকটি নকল সিডির কারখানা বন্ধ করা গেলেও বন্ধ করা যায়নি পাইরেসি। এ ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা দরকার। পাড়ায়-মহল্লায় এখন অনেকেই একটা কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়েছেন মেমোরি কার্ডে গান ভরে দেওয়ার ব্যবসায়। এতে করে চরম ক্ষতি হচ্ছে অডিও ব্যবসার। এসব বেআইনি বিষয় দেখার যেন কেউ নেই।
এমআইবি : সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এ বছরের অডিও ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় পাওয়া মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ। সংগঠনের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি কুমার বিশ্বজিত্ মনে করছেন, এতদিনে প্রযোজকদের কথা বলার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। সবাই জোট বেঁধে না এগোলে অডিও বাজারের এ দুর্দশা দূর হবে না। দুর্দশা লাঘবে এমআইবি বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সবাই।
বছরের প্রথম দিনে এসেছিল প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে প্রিন্স মাহমুদের গান। সামিনা চৌধুরী, মেহরাব ও পলাশের সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদ নিজেও সেখানে গান গেয়েছিলেন।
চলচ্চিত্রের গানের অ্যালবামের জয়যাত্রা এ বছরও চলেছে। গত বছরের মতো এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত অ্যালবামটি একটি চলচ্চিত্রের—থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। অর্ণবের সুরে জাগো, হাবিবের সুরে এই তো প্রেম অ্যালবাম দুটিও বেশ আলোচিত।
বছরের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে ছিল আজম খানের নীল নয়না, কুমার বিশ্বজিতের রোদেলা দুপুর, বেবী নাজনীনের দুষ্টু ছেলে, আসিফের বন্ধু তোর খবর কি রে এবং পানি নাই চোখে, মিলার রিডিফাইন্ড, বালাম-জুলির স্বপ্নের পৃথিবী, রাজীব রহমানের মন ভাবে তারে, ফাহমিদা নবীর স্বপ্নগল্প, রবি চৌধুরীর রঙের বন্ধু, বারী সিদ্দিকীর প্রেমের উত্সব ও অন্তর জ্বলে, এস ডি রুবেলের এক টাকার মানুষ, কাজী শুভর সাদামাটা, বারী সিদ্দিকীর মাটির ঘর, কুমার বিশ্বজিত্-ফাহমিদা নবীর হাঁটি, সালমার বন্ধু আইলা না, রন্টির আনমনা মন, রিংকুর হাওয়ার গাড়ি, এলিটা মাহাদীর অন্তহীন, প্রীতমের স্ট্রিট সিংগার, আরফিন রুমির এসো না, তিশমার এক্স-ফ্যাক্টর, মুহিনের গোপন কথা, তপুর সে কে?, ক্ষুদে গানরাজদের ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি, আঁখি আলমগীরের তোমার কাছেই, আবিদের ভালোবাসার প্রহর, হায়দার হোসেনের না বলা কথা, মনির খানের শুধু একবার কথা দাও, সন্দীপনের চাঁদমুখের হাসি, সুবীর নন্দীর সোনার কন্যা, আবিদা সুলতানার অন্তরে বৈরাগী, চঞ্চল চৌধুরীর পালকি, শশীর যেও না, রাজিবের যদিও, শান্তনু বিশ্বাসের চিরকুট, জাহিদ পিন্টুর রেড সিগন্যাল, মিলন মাহমুদের গোপনে, শিরিনের মাতওয়ালি, জুয়েলের ফিচারিং সাবরিনা, অর্ণবের অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লাইভ, সায়ানের আবার তাকিয়ে দেখ ইত্যাদি।
ব্যান্ডপাড়া : রাজনৈতিক পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক থাকায় বছরজুড়ে ব্যান্ডগুলোর কার্যক্রম বেশ বেড়েছে। তবে সেটা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে ব্যান্ড দলগুলো। এলআরবির যুদ্ধ ও সোলসের জ্যাম সারা বছর আসি আসি করে বাজারে আসেনি। তবে বছরের একদম শেষে বের হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম বলিনি কখনো। আরও বের হয়েছে
বিপ্লবের পুরুষ মানেই দেবদাস।
এ বছর ছিল মাইলসের ৩০ বছর পূর্তি ও দলছুটের ১২ বছর পূর্তি। ব্যান্ড দুটি এ উপলক্ষে তেমন কিছু না করলেও ১০ বছরে পা দেওয়া আর্টসেল বেশ বড় করেই কনসার্টের আয়োজন করেছে। বেরিয়েছে ওয়ারফেইজের ২৫ বছর পূর্তি স্মারক অ্যালবাম পথচলা। এর বাইরে অবসকিউরের ইচ্ছের ডাকাডাকি, শিরোনামহীনের বন্ধ জানালা, পেন্টাগনের এইট ও’ক্লক, মেঘ দলের শহরবন্দী, সাসটেইনের রহস্য, রক টু জিরো টু, রক থ্রি জিরো থ্রি। বছরের শেষদিকে এসে বামবা সজাগ হয়েছে শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারদের কপিরাইট অধিকার নিয়ে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে রয়্যালটিসহ তিন দফা দাবি নিয়ে বামবা আন্দোলনে যাবে বলে জানা গেছে।
পার্থ সরকার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ৩১, ২০০৯
Leave a Reply