
ব্যান্ডসংগীতকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে সাবকনশাস নামটি অপরিচিত নয়। অল্প সময়ে সাবকনশাস জায়গা করে নিয়েছিল শ্রোতাদের মনে। দীর্ঘ সময় এর অনুপস্থিতিতে অনেকেই ভাবছেন, ব্যান্ডটি হারিয়ে গেছে। না, ব্যান্ডটি হারায়নি। শ্রোতাদের জন্য এটি এখন সক্রিয়। এ ব্যান্ড নিয়েই আজকের আয়োজন।
শ্রোতাদের মনে সাবকনশাস কিছুটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই বৈশাখী টিভির কোনো লাইভ কনসার্ট এবং রেডিও টুডের কক্সবাজারের অনইয়ারে দর্শক-শ্রোতা খুঁজে পান সাবকনশাসকে। অনেক দিন পর সাবকনশাসকে পেয়ে ভক্তরা অনেক খুশি। শো চলার সময় ফোন করে সেই খুশির জানান দিয়েছিলেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কয়েকজন ছাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সাবকনশাসকে কেন ভালো লাগে। সবার উত্তরই প্রায় এক। মজার মজার গানের কথা, কাহিনিনির্ভর গান ও গায়কির কারণে সাবকনশাস তাঁদের ভালো লাগে।
কথা হচ্ছিল ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী ও গিটারবাদক জোহান এবং তাঁর সহোদর ড্রামবাদক লুকানের সঙ্গে। জোহান বলেন, ‘আসলে প্রথম থেকেই আমরা গল্পপ্রধান গান নিয়ে কাজ করছি। এর প্রায় সবই লুকানের সৃষ্টি। ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের গানের বিষয় পছন্দ হলে আমরা তাতে প্রাণের সঞ্চার করে থাকি।’
জীবনের পিছুটানে শ্রোতাদের সঙ্গে অনেক ব্যবধান তৈরি হওয়া সত্ত্বেও সংগীতের সঙ্গে তাঁদের সখ্য মোটেও কমেনি। সবাই এখন জীবনমুখী। জানা গেল ব্যান্ডের সবার ব্যস্ততার বিবরণ। এ ব্যান্ডের প্রধান কণ্ঠশিল্পী জোহান সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অবশ্য ছুটিতে এখন তিনি দেশে আছেন। নাবিল পেশাগতভাবে সংগীতশিল্পী। লুকানের পড়াশোনা শেষ হলেও তিনি কাজ করছেন প্রকৌশলী হিসেবে। শেহরিনা চাকরি করছেন জার্মানিতে; আর অমিত কাজ করছেন বিশ্বব্যাংকে।
নানাবিধ এ ব্যবস্থায় তাঁরা সংগীত বা ব্যান্ড থেকে বাইরে—এ কথা স্বীকার করতে সবাই নারাজ। তাঁরা জানান, ব্যস্ততার ফাঁদে পড়লেও তাঁরা ব্যান্ড ভালোবাসেন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। তাই তাঁরা নিজ অবস্থানে থেকে ব্যান্ডের জন্য কাজ করছেন। সবাই এক হয়ে প্রতিবছর বেশ কয়েকটি কনসার্টেও অংশ নিচ্ছেন নিয়মিতভাবে।
গত ছয় বছর কোনো নতুন অ্যালবাম শ্রোতাদের উপহার না দিলেও শ্রোতাদের জন্য চমক থাকছে তাঁদের পক্ষ থেকে। এ প্রসঙ্গে জোহান বলেন, ‘এবার যে অ্যালবামটির জন্য কাজ করছি, তার ১০টি গান তৈরি হয়ে গেছে। প্রস্তুতি চলছে আরও ২০টি গানের জন্য। এই ৩০টি গান থেকে বাছাই করা গান নিয়ে প্রকাশ করা হবে দুটি নতুন অ্যালবাম। এ অ্যালবামের গানে শ্রোতারা আমাদের পাবেন অন্য রকম করে। আগের গানগুলোর মতো এবারের গানগুলো হবে না। তাই নতুনত্ব আর মজার কিছু দেওয়ার জন্যই এই বিলম্ব। লুকান ও জোহানের গবেষক-মামার গবেষণার একটি বই আছে, যার বিষয় হচ্ছে আকাশ। সেই বই থেকেই এবারকার অ্যালবামের জন্য গান লেখা হচ্ছে।’
এবার একটু গোড়ার দিকে যাওয়া যাক। ১৯৯৮ সালের কথা। তখন জোহান, সুজয়, লুকান—সবাই স্কুলের ছাত্র। স্বেচ্ছায় তাঁরা প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। তারপর শিক্ষানবিশ অবস্থাতেই কেটে যায় চার বছর। ২০০২ সালে সাবকনশাস নামে তাঁরা আবির্ভূত হন বেনসন অ্যান্ড হেজেসের স্টার সার্চের মঞ্চে। সে বছর তাঁরা চ্যাম্পিয়নও হন। তারপর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির আমন্ত্রণে প্রকাশ করেন মাটির দেহ নামের প্রথম অ্যালবাম। শুরুতেই হিট। ‘মাঝি’, ‘বুলসিড’, ‘নষ্ট হয়েছি’, ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ ও ‘ঢাকা’ শিরোনামের গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সাবকনশাস চলে আসে লাইমলাইটে। তারপর সদস্যসংখ্যায় দু-একবার যোজন-বিয়োজন হয়। যুক্ত হয় নতুন মুখ। এভাবেই পথচলা অনেক দিনের। পরের অ্যালবাম তারার মেলা বাজারে আসে ২০০৪ সালে। তখন অ্যালবামটি আলোচনায় না এলেও দু-এক বছর পর এফএম রেডিওগুলোতে প্রায় সব গান জনপ্রিয়তা পায়।
তারপর শুধুই ব্যস্ততা। ব্যস্ততা তাঁদের দরজায় সব সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা শ্রোতাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে চান না। তাই তো নিজস্ব অবস্থানে তাঁদের অনুভূতিগুলো জড়ো হচ্ছে নতুন একটি অ্যালবামের জন্য। ব্যান্ডের সবার আশা, অচিরেই তাঁরা নিয়মিত হবেন দর্শক-শ্রোতার মঞ্চে। আরও নতুন গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসায় সিক্ত হবেন তাঁরা।
কনক হাসান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৭, ২০১১
Leave a Reply