
লিখেছেন : আকাশ মালিক
গোয়েন্দা পুলিশ ধর্ষক মজনুকে অল্প সময়ে ধরতে পেরেছে এ জন্যে পুলিশকে ধন্যবাদ। যদিও অপরাধী ধরাই পুলিশের কাজ। একই সাথে বলবো ইংল্যান্ডের ৪৫ বছরের জীবনে অনেক মারাত্বক ধরণের চুরি ডাকাতি সন্ত্রাসী ধর্ষণের কেইসের পুলিশ ব্রিফিং দেখেছি, কিন্তু এমন বিসমিল্লাহ আর সালাম জানিয়ে রাজনীতিবিদদের গরম বক্তৃতার ভাব নিয়ে বাংলাদেশী পুলিশ ষ্টাইলের ব্রিফিং জীবনেও দেখি নাই। ধর্ষণের সকল আলামত দুনিয়ার সামনে মেলে দেখানো বোধ হয় একমাত্র বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষেই সম্ভব। আর পুলিশ নিজে থেকে আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দেয়াটাও কেমন যেন লাগলো। ফরেন্সিক এক্সামিনেশন, ডি এন এ টেস্ট ও ডাক্তারের রিপোর্ট পাওয়ার আগে শুধু ভিকটিমের সাক্ষী, আসামীর স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে পুলিশ সাধারনত আসামীকে দোষী ঘোষণা দেয়না। কারণ , ভিকটিমের সাক্ষী, আসামীর স্বীকারোক্তি দুটোই ডি এন এ টেস্ট ও ফরেন্সিক এক্সামিনেশনে গিয়ে মিথ্যে প্রমাণীত হয়েছে এমন অনেক ঘটনার প্রমাণ আছে।
ফেইসবুকে পত্রিকায় প্রচুর মানুষ পুলিশের কাজে সন্দেহ পোষণ করেছেন সাজানো নাটক বলে। ঘর পোড়া গরুর কপাল পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ জজ মিয়া নাটক করে অনেক আগেই। তার সাথে যোগ হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী অসৎ মিথ্যাচারী পুলিশের বয়ান, দল বেঁধে পুলিশের ধর্ষণ, মানুষের পকেটে ইয়াবা ভরে দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানানোর ঘটনা। সঙ্গত কারণেই মানুষ আজ সন্দেহের চোখে তাকায় পুলিশের সকল কাজে। জনতার পূর্ণ আস্তা অর্জন করতে হলে পুলিশকে আরো অনেক সততার পরীক্ষা দিতে হবে। ঘর পোড়া গরু যেমন সিঁদূরে মেঘ দেখলে ভয় পায়, আমিইও পুলিশের গালে দাড়ি, মুখে বিসমিল্লাহ আর সালাম শুনলে কিছুটা ভয় পাই বৈকি। বিসমিল্লাহ আর সালাম দিয়ে পুলিশ তার স্টেইটমেন্টকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছেনা তো? তবে আজকের অপরাধী ধরাটা নাটক নয় বলেই আমার মনে হচ্ছে।
এবার দেখা যাক, পাবলিক আদালতের বিচারকগন অপরাধী ধর্ষক মজনু মিয়ার রায়ে কতো প্রকারের কী কী শাস্তি লিখেছেন।
– ওর লিংগ কেটে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
– কপালে লোহার স্যাকা। যাতে মানুষ দেখলেই বোঝে ও ধর্ষক ছিল।
– ধর্ষককে ধরে রাস্তার মোরে পুরে মারা হোক।
– লিংঙ্গ কেটে দেওয়া হোক, তাদের জন্য মানবতা নয়, মানুষ দেখুক তার লিঙ্গ নাই।
-এই কুকুরের প্রকাশ্য ফাঁসি চাই।
– তাকে খোজা করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হোক। সে দুনিয়ায় জীবনমৃত থাকুক।
– ক্রস ফায়ার হোক একমাত্র বিচার।
– নুনুটা কাইটা দেয়া হউক খা…..কীর পোলার।
– ফাসিঁ চাই। তবে প্রকাশ্যে।
– যেখানেই ধর্ষক সেখানেই ক্রসফায়ার, যাতে ভয়ে কেউ আর ধর্ষণ করতে না পারে।
কপাল আমার, উপরের একটা শাস্তির সাথেও আমি একমত নই। আপনারা বলবেন, মজনু ধর্ষকের জন্যে আপনার এতো আহলাদ কেন? না, কোনো ধর্ষকের প্রতি আমার মোটেই আহলাদ নেই। আমি শুধু বলতে চাই, একটা একটা করে ধর্ষককে ক্রস ফায়ারে দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবেনা। কেউ পুলিশকে প্রশ্ন করলোনা, এই জায়গাটা সন্ধ্যার সাথে সাথে অন্ধকার হয়ে যায় কেন, বারবার একই জায়গায় ক্রাইম হওয়ার পরেও এই জায়গায় পুলিশের নজরদারী থাকলোনা , লাইট থাকা সত্তেও বাতি জ্বলেনা, নির্জন অন্ধকার জায়গায় বাস স্টপ কেন, সিরিয়েল রেইপিষ্ট মজনু গোয়েন্দাদের নজরে আগে ধরা পড়লোনা কেন? সিরিয়েল রেইপিষ্ট শব্দটা গোয়েন্দা প্রধান এমন ভাব করে উচ্চারণ করলেন যেন, বিরাট এক দুর্ধষ এক্সট্রিমলি ডেঞ্জারাস সিরিয়েল মার্ডারার রেইপিষ্ট খুনী ধরে ফেলেছেন। দেখা গেল রেল লাইনের পরিত্যক্ত বগির সে এক বাসিন্দা। তবুও সে মারাত্বক অপরাধী, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ আর হতেই পারেনা, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ।
ধর্ষণ ঘটার পরে ধর্ষককে গুলি করে মেরে সমস্যার সমাধান হবেনা। ধর্ষক যাতে জন্ম না নেয়, কারো সন্তান যেন ধর্ষক হয়ে বড় না হয়, ধর্ষণের পরিবেশ যেন কোথাও সৃষ্টি না হয়, কাল যেন আরেকটা ধর্ষণ না ঘটে সেই ব্যবস্তা করার উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। একজন ধর্ষককে সকল দোষের দোষী বানিয়ে শাস্তি দিয়ে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাষ্ট্র, পরিবারকে নির্দোষ প্রমাণীত করার বা দায়মুক্ত রাখার চেষ্টা করা ভুল হবে। এই মজনুকে ধর্ষক হয়ে গড়ে উঠার পেছনে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা দায়ী, দায়ী সেই তনু হত্যাকারীর বিচার যারা করেনি তারা, দায়ী সেই পুলিশ যারা তনুর ধর্ষককে ধরতে পারেনি বা ধরতে চায়নি।
মানুষ ধর্ষক হয়ে জন্মায় না, মানুষের সন্তানকে মানুষ করে গড়ে তোলার দায় পরিবারের সমাজের রাষ্ট্রের, এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
Leave a Reply