
লিখেছেন : দেবাশিস সেনগুপ্ত
সব মন্দই কিছু ভালো নিয়ে আসে। প্রায় সব অন্ধকারই আলোর জানান দেয়।
রাত জেগে একটা ফিচার দেখছিলাম বিবিসি’তে দুনিয়াজুড়ে করোনার আতঙ্ক আর দমবন্ধ আবহে ঘন্টাখানেকের সতেজ খোলাহাওয়া!
হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! মাত্র কয়েক’সপ্তাহেই পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবীটা! এই যে এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে মানবসভ্যতা, লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষের বাঁচার ধরণটাই যাচ্ছে পাল্টে, সামাজিক ছবিটা হয়ে যাচ্ছে ওলোটপালোট, এ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা দূর্ঘটনা তো নয়! সভ্যতার বেলাগাম দৌরাত্মের কি এমনই পরিণতি হওয়ার ছিল না? মানুষ কি সত্যিই টের পায়নি? তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) চীফ সায়েন্টিস্ট কীভাবে দাবী করছেন যে ২০১৫-১৬ সাল থেকে উন্নত দেশগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছিল, যে কোনো সময়ে আঘাত হানতে পারে কোনো ভয়ঙ্কর মহামারী! পাল্টে দিতে পারে গোটা পৃথিবীর চালচিত্র, মানবসভ্যতাকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সামনে!
ভবিষ্যদ্বাণী বা আশঙ্কার কথা যদি উড়িয়েও দেওয়া যায়, তবুও এটা সত্যি এবং বাস্তব যে পাল্টে যাচ্ছে পৃথিবী। দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে হু হু করে কমছে দূষণের মাত্রা! চীন, ইটালী বা ব্রিটেনের আকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে কমছে নাট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড আর কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা! পরিবেশবিদদের হতবাক করে নিউইয়র্কের আকাশে দূষণের মাত্রা কমেছে ৫০%য়েরও বেশী! স্রেফ উপগ্রহ ছবিতে নয়, ঘরবন্দী ইউরোপের মানুষ খালি চোখেও দেখতে পাচ্ছে ঝকঝকে নির্মল আকাশ! স্মরণকালের মধ্যে যা কখনো দেখেনি তারা!
দল বেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। সভ্যতা থেকে দূরে সরে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক ফিরে আসছে মানুষের কাছে, ভেনিস থেকে মুম্বাই সর্বত্র! রাশ পড়েছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারেও। অবিশ্বাস্য, তাই না?
এদেশেও কমবে দ্রুত হারে, জল এবং বায়ুদূষণ। যত মানুষ সেঁধিয়ে যাবে ঘরে, বন্ধ হতে থাকবে মাঝারি ও বড় শিল্প, কমবে গাড়ীঘোড়া বা বিমানের জ্বালানী দূষণ। শুধু চীনেই গত দু’মাসে জ্বালানীর ব্যবহার কমেছে ৩০%য়েরও বেশী।
গোটা মানবসভ্যতাকে মাত্র সাত-আট সপ্তাহে কেউ যেন প্রবল ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিয়েছে!
বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে এ স্রেফ শুরু! এই আপাতঃ নিরীহ এক ভাইরাস (মৃত্যুহার যেহেতু ১%য়ের আশেপাশে) গোটা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দেবে। পাল্টে দেবে আমাদের মানসিকতা, আমাদের জীবনযাত্রা। একদিকে সীমান্ত মুছে গিয়ে গোটা পৃথিবী দাঁড়াবে এক আকাশের নীচে, অজানা অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে একজোট হয়ে। অন্যদিকে ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া মানুষ প্রাথমিক ধাক্কাটুকু সামলে হাত বাড়িয়ে দেবে প্রতিবেশীর দিকে। চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আগে ভাববে আত্মীয়, বন্ধু, পড়শীদের কথা।
করোনাঢেউ স্রেফ এই এক-দু’মাসের গল্প নয়। একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে বাজারে আসতে সময় নেবে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ মাস। এরমধ্যে পৃথিবীর অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হবে দফায় দফায়। যতদিন ভ্যাকসিন না আসছে, করোনায় ইমিউনিটি তৈরী হওয়ার একমাত্র পথ এতে আক্রান্ত হওয়া।
WHOর মতে এখনও ভারত সহ বিশ্বের প্রায় কোনো দেশেই মাস-টেস্টিং শুরু হয়নি। কেবল সন্দেহভাজন উপসর্গ দেখলেই টেস্ট হচ্ছে। মজা হল এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর উপসর্গ দেখা দিতে সময় নিচ্ছে ৭-১০ দিন। ততদিন ধরে ঐ ধারক বা বাহক জানতেই পারছেন না যে তার শরীরে ভাইরাস আছে অথচ নিজের অজান্তেই তিনি সেই ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন আরো ১০০ মানুষের শরীরে।
তাহলে কী দাঁড়ালো? আক্রান্তের যে ছবি বা পরিসংখান আমাদের সামনে এই মুহূর্তে আছে, সে ভারতের হোক বা পৃথিবীর, আসল সংখ্যাটা হয়ত তার বহুগুণ বেশী!
কী অদ্ভুত না? আমরা আমাদের অটো-ইমিউনিটির কথা জানতাম বটে। কিন্তু এই পৃথিবীরও যে একটা অটো-ইমিউনিটি সিস্টেম আছে, তা ভাবিনি কখনো! যেন তিতিবিরক্ত ধরণী আর সইতে না পেরে সেই বোতামটাই টিপে দিয়েছেন!
বিজ্ঞানীদের মতে আগামী একবছরে করোনা-বিপর্যস্ত মানুষ, দফায় দফায় ঘরবন্দী থাকা মানুষ পৃথিবীর দূষণ কমিয়ে ফেলবে প্রায় ৪৫%! পরিবেশ ফিরে যাবে ৫০০ বছর আগে, বিশুদ্ধতার নিরিখে। মাস’ছয়েকের মধ্যে কমতে থাকবে হিমবাহের গলন, বন্ধ হয়ে যাবে বছরখানেকের মধ্যে।
নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ, ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধতে। ধূলো-ধোঁয়া-অন্ধকার পেরিয়ে সেই নতুন পৃথিবীর সোনালী আলোর রেখা হয়ত দেখা যাচ্ছে এখন থেকেই!

, This is a very good article, which we all need very much. Your post is very informative. Thank you very much. you can visit our site https://www.outsourcinghelp.net/
This COVID-19 teach us many things. We should learn from this situation. We should control ourself. Thanks to such posting.
In this situation, many people lost their job. But in online there many opportunities to earn many. If you u want to learn How to earn money from online. You should visit this link- https://www.outsourcinghelp.net/
জি! অনেক ভালো লাগলো । ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।
আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে পোষ্ট করেছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি এরকম গোছানো একটি পোষ্ট খোজছিলাম। আপনাদের এই পোষ্টটি পড়ে সত্যি উপকৃত হলাম। আরও জানুন আজকের ফেক্ট